
প্রকাশিত: Wed, Jan 18, 2023 4:04 PM আপডেট: Sat, May 10, 2025 4:01 PM
বইমেলার স্টল বরাদ্দের নীতি ও ভিন্নমত
কাকন রেজা
ভিন্নমত বিষয়টা কী। একটা মতের বিপরীত মত। ভাববাদের বিপরীতে যেমন বস্তুবাদ। তবে কী বস্তুবাদ ভিন্নমত বলে নিষিদ্ধ হবে কিংবা ভাববাদ? তাই যদি না হয়, তবে বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠছে কেন? কেন বলা হচ্ছে, ভিন্নমতের বই প্রকাশের জন্য কয়েকটি প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয় তবে বাংলা একাডেমির দায়িত্বশীলরা দয়া করে ব্যাখ্যা দেবেন কি, তারা ভিন্নমত বলতে কী বোঝেন? উনারা যে মতের অনুসারী সে মতও কারো কাছে ভিন্নমত। এই চর্চা চালু থাকলে আগামী দিনে অনেক প্রকাশনীর ভাগ্যেই স্টল জুটবে না। তখনও সেই ভিন্নমতের কথাই বলা হবে। এটা অসম্ভব একটা খারাপ চর্চা। যদি বাংলা একাডেমি এই চর্চা করে থাকে, তাহলে দায়িত্বশীলদের অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত।
মতের হিসেবে দেখতে গেলে সব মতই ভিন্নমত। আমি যে লিখছি, আমার যে মত, এটাও কারো কাছে ভিন্নমত। তার অর্থ এই নয় প্রতিটি লেখাকে নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রতিটি বয়ানেরই পাল্টা বয়ান রয়েছে। দর্শন মানেই দ্বন্দ্ব। সে রাজনৈতিক দর্শন হোক কিংবা অন্য কিছু। আর দ্বন্দ্ব থেকেই সত্য উদ্ভাসিত হয়। দুটো পাথরের ঘর্ষণে যেমন আগুন জ্বলে। দ্বন্দ্ব তেমনি দুটি পাথর, আর আলোটা হলো সত্য।
ভিন্নমত দমন কিংবা ভিন্নমতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া হলো ফান্ডামেন্টালিজম, বিশুদ্ধ মৌলবাদ। আমিই ঠিক এবং আমিই থাকবো, অন্যরা থাকবে না, এটা আইসিস আর আরএসএস এর বয়ান। কাফের, যবন আর শ্রেণিশত্রু খতমের বয়ান। যে বয়ান শুধু ধ্বংসের কথাই বলে। যার বিরুদ্ধে সারাবিশ্বই একাট্টা। সব সভ্য এবং সুস্থ চিন্তার মানুষেরাই এর বিপক্ষে। মানুষকে তার চিন্তার কথা বলতে দিতে হবে, তার মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ ভেদে চিন্তা ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। না হলে তো একটা রাজনৈতিক দলই থাকতো। সব দেশ হয়ে যেত উত্তর কোরিয়া, সব সরকার প্রধান কিম জং আন। একটা মাত্র দলের চিন্তা রাজনৈতিক মৌলবাদ, পিউর ফ্যাসিজম। উত্তর কোরিয়াতে যা প্রতিষ্ঠা করেছে কিম। তার বাপের মৃত্যুদিবস থেকে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত মানুষ আনন্দ করতে পারবে না, সব উৎসব নিষিদ্ধ। জন্মদিনে নিষিদ্ধ শোক। নির্বাচন হবে কিন্তু প্রার্থী থাকবে একজন। মানুষকে সিলও দিতে হবে না, শুধু নির্বাচনের দিন বাধ্যতামূলক ব্যালটটা বাক্সে ফেলে আসতে হবে। তারপর ঘোষণা হবে মহামান্য, মাননীয় কিম নির্বাচিত।
বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে যে অভিযোগের কথা উঠেছে তা যদি সত্যি হয়, তাহলে সত্যিই শঙ্কার কথা। প্রশ্ন উঠবে, তবে কি দায়িত্বশীলরা বাংলা একাডেমিকে কিম স্টাইলে চালাতে চাচ্ছেন? গতবারও স্টল বরাদ্দ নিয়ে কথা হয়েছে। এবারও হচ্ছে। মহাপরিচালক বদলেছেন কিন্তু রীতি বদলায়নি। দূরদর্শিতা না থাকলে যা হয় আর কী। যে রীতি চালু হলো, তা চলতে থাকলে এখনকার অনেক দায়িত্বশীলদেরই নিজেদের রীতির জালেই পড়তে হবে। আর সে রীতিতে বিরক্ত মানুষ আর তাদের পক্ষে দাঁড়াবে না। একসময় তাদের মার্টিন নিওমোলারকে স্মরণ করে বলতে হবে, ‘দ্যায়ার ওয়াজ নো ওয়ান লেফট টু স্পিক’। ফুটনোট : একটি দৈনিক বাংলা একাডেমির বরাতে জানালো, বই নিয়ে আপত্তির ব্যাপারে। কথা একটাই সেই ভিন্নমত। সুতরাং বিষয়টা শুধু আর প্রকাশকদের অভিযোগে সীমাবদ্ধ রইলো না। লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
